ঢাকা মিরপুর থেকে: টানা ৫টি সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের কাছে রেখে দিল মাশরাফি-তামিম-মুশফিকরা।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৪১ রান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। বড় কোনো জুটিও হয়নি। তবে, টাইগারদের হয়ে ইমরুল কায়েস, নাসির হোসেন আর সাব্বির রহমান দারুণ ব্যাটিং করেন। সাকিব আল হাসানের জায়গায় সুযোগ পেয়ে ইমরুল কায়েস করেন ইনিংস সর্বোচ্চ রান।
টাইগারদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। ওপেনিংয়ে নেমে তামিম ব্যক্তিগত ১৯ রান করে বিদায় নেন। পানিয়াঙ্গারার বলে চিবাবার তালুবন্দি হওয়ার আগে ওপেনিং জুটিতে ইমরুলকে নিয়ে ৩২ রান তোলেন তামিম। তামিমের বিদায়ে ব্যাটিং ক্রিজে আসেন লিটন দাস। তবে, এদিনও বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে পারেননি মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত ৭ রান করে পানিয়াঙ্গারার অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি।
দলীয় ৪৭ রানের মাথায় তামিম, লিটনের বিদায়ের পর ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব পালন করছিলেন ইমরুল কায়েস-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জুটি। দলীয় ১৮তম ওভারে গ্রায়েম ক্রেমারের বলে উইকেটের পেছনে চাকাভার গ্লাভসবন্দি হয়ে বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৪ রান করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
এরপর ম্যাচের ২৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ক্রেমারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। আউট হওয়ার আগে তিনি ২৮ বল মোকাবেলা করে তিনটি চারে করেন ২১ রান। মুশফিকের পর সাজঘরে ফেরেন গত বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো টাইগারদের রঙ্গিন জার্সি গায়ে খেলতে নামা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। শন উইলিয়ামসের বলে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন দায়িত্ব নিয়ে খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৮৯ বল মোকাবেলা করে ৬টি চার আর ৪টি ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৭৬ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এগারোতম অর্ধশতক হাঁকান তিনি। ইমরুলের বিদায়ে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
দলীয় ১৯৩ রানের মাথায় টপঅর্ডারের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৪২তম ওভারে লুক জঙ্গোর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান। চাকাভার গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে তিনি ৪০ বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। নাসিরের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে আরও ৪২ রান যোগ করেন সাব্বির।
টাইগারদের দলপতি মাশরাফি হাত খুলে খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে ইনিংসের ৪৭তম ওভারের শেষ বলে মুজারাবনিকে তুলে মারতে গিয়ে চিবাবার হাতে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে মাশরাফি ১৪ বলে করেন ১৩ রান। এরপর ওয়ানডেতে ৫৫তম ম্যাচ খেলতে নামা নাসির ৪১ রানে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি সীমানায় আরভিনের তালুবন্দি হন। আউট হওয়ার আগে তিনি ৫৩ বল মোকাবেলা করে তিনটি চার মারেন। এরপর দ্রুত ফেরেন ৩ রান করা আরাফাত সানি। আল আমিন এবং মুস্তাফিজুর অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ছয় বোলার বল করেন। ১০ ওভারে ৪১ রান খরচায় পানিয়াঙ্গারা সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া দুটি করে উইকেট পান মুজারাবানি এবং গ্রায়েম ক্রেমার। একটি করে উইকেট তুলে নেন লুক জঙ্গো এবং শেন উইলিয়ামস। এ ম্যাচেও বল করেননি জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চিগুম্বুরা।
২৪২ রানের টার্গেটে সিরিজে সমতায় ফিরতে মরিয়া জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন রেগিস চাকাভা এবং চামু চিবাবা। টাইগারদের বোলিং আক্রমণ শুরু করেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভার থেকে দুই ওপেনার মাত্র এক রান তুলতে সমর্থ হন।
বেশ সতর্ক থেকেই এগুতে থাকা সফরকারীরা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওপেনিং ব্যাটসম্যান রেগিস চাকাভাকে হারায়। ইনিংসে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে আরাফাত সানির বলে এলবির ফাঁদে পড়েন ১৯ বলে এক রান করা চাকাভা। পরের ওভারে আরেক ওপেনার চিবাবাকে (১৪) বোল্ড করেন মাশরাফি।
এরপর চলমান সিরিজে প্রথম উইকেটের দেখা পান কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের নবম ওভারের শেষ বলে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান শেন উইলিয়ামসকে নাসির হোসেনের কাছে ক্যাচ দিতে বাধ্য করান মুস্তাফিজ। আউট হওয়ার আগে ১৪ রান করেন উইলিয়ামস।
দলীয় ৪৫ রানের মধ্যে টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান আউট হলেও দলের হাল ধরেন ক্রেইগ আরভিন ও এলটন চিগুম্বুরা। তবে ২০তম ওভারের শেষ বলে রান আউটের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আরভিন (২৬)। এর মধ্য দিয়ে দু’জনের ৩৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিও ভাঙে।
জিম্বাবুয়ের দলপতি এলটন চিগুম্বুরা এবং সিকান্দার রাজার ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি ভেঙে দেন আল আমিন হোসেন। ৩৪তম ওভারে আল আমিনের বল তুলে মারতে গিয়ে ইমরুল কায়েসের তালুবন্দি হন রাজা। আউট হওয়ার আগে তিনি দুটি চার আর একটি ছয়ে ৪২ বলে ৩৩ রান করেন। চিগুম্বুরার সঙ্গে ৭৩ রানের জুটিও গড়েন তিনি। এক ওভার পর আল আমিনের আরেকটি আঘাতে বিদায় নেন চিগুম্বুরা। ১৯৩ ওয়ানডে খেলা চিগুম্বুরা ইমরুলের হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ৪৭ রান। ২০তম ওয়ানডে অর্ধশতক থেকে মাত্র তিন রান দূরে থাকা জিম্বাবুয়ের দলপতি ৭৭ বলে দুটি করে চার ও ছয়ে তার ইনিংসটি সাজান।
জিম্বাবুয়ের সপ্তম ব্যাটসম্যান হয়ে সাজঘরে ফেরেন ম্যালকম ওয়ালার। নাসির হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৮ রান করা ওয়ালার। পরের ওভারে মুস্তাফিজ বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ১১ রান করা লুক জঙ্গোকে। একই ওভারে কাটার মাস্টার বিদায় করেন পানিয়াঙ্গারাকেও। মুস্তাফিজের বোলিং তোপে লেজ গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের। শেষ উইকেটটি তুলে তুলির শেষ আঁচর দেন নাসির হোসেন।